বিগত অনেক বছরের মধ্যে ও আগামী বহু বছরের মধ্যে দেখা যাওয়া উজ্জ্বল ধূমকেতুটির মধ্যে আইসন অন্যতম। অনেকে তাই একে শতাব্দীর সেরা ধূমকেতু হিসেবে অভিহিত করছেন। ২০১২ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর এই ধূমকেতু রুশ দেশে একটি ছোট প্রতিফলক দুরবিন দিয়ে আবিষ্কার করেন ভিতালি নোভস্কি ও আর্তিয়েম নভোচিনক। তাঁরা International Scientific Optical Network (ISON) এর মাধ্যমে এই ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেছেন বলে এর নাম হয়েছে C/2012 S1 (ISON)। ধূমকেতুটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো আলোচিত এই ধূমেকতুটি সনাক্তকরণ ও ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগ।
অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনুর নেতৃত্বে প্রথম পর্যায়ে ৩ নভেম্বর রবিবার ভোর পাঁচটায় মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার শিমুলিয়া গ্রামে (অক্ষাংশ- ৯০⁰১৮মি.পূর্ব ও দ্রাঘিমাংশ- ২৩⁰২৮মি.উত্তর বা কর্কটক্রান্তি রেখা) চক্র আয়োজিত আকাশ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প থেকে আইসন ধূমকেতু সনাক্ত করা হয় ও ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে চক্রের পর্যবেক্ষণ দলের কর্মীরা মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার খইরা গ্রামে পরবর্তী ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। উক্ত ক্যাম্প থেকে অনুসন্ধিৎসু চক্রের ৮” ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ ও ক্যানন EOF 5D ক্যামেরা দিয়ে আইসন ধূমকেতুর ছবি তুলতে সক্ষম হন তারা। ছবির এক্সপোজার সময় ছিলো- ৩ মিনিট। আইসন ধূমকেতুটির বিষয়ে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য উক্ত ছবিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থার নিকট প্রেরণ করা হয়। আজ সকালে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেন যে বাংলাদেশ থেকে তোলা ছবির ধূমকেতুটিই ধূমকেতু আইসন। ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন চক্রের আজীবন সদস্য আজহারুল হক, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরাফাত রহমান, নিয়াজ মোর্শেদ, জাহাঙ্গীর আলম দীপু ও অপূর্ব। অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনু জানান, ভোরের পুবাকাশে কন্যারাশি বা ঠরৎমড় তারামন্ডলের জপজবা তারার একটু নীচে ডানে বর্তমানে আইসন ধূমকেতুটি অবস্থান করছে। চক্রের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে প্রায় দেড় মাস চেষ্টার পর ধূমকেতুটি পাওয়া গেছে। আইসনের উজ্জ¦লতা সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে যেরকম ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছিলো, ধূমকেতুটি সে অনুপাতে উজ্জ্¦ল নয়। আইসনের বর্তমান উজ্জ্বলতা ৭.৫। খালি চোখে বা বাইনোকুলার দিয়ে বর্তমানে এটি দেখা যাচ্ছেনা। তবে আস্তে আস্তে এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর এই ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অনুসূর বিন্দুতে থাকবে। সেমসয় আইসন সূর্য পৃষ্ঠের মাত্র ১.১ মিলিয়ন বা ১১ লক্ষ কিলোমিটার ওপর দিয়ে পার হবে। অনুসূর বিন্দু পার হবার পর সন্ধ্যার আকাশে দুই গোলার্ধ থেকেই এটিকে পশ্চিম আকাশে দেখা যাবার কথা রয়েছে।
আইসন ধূমকেতু পর্যক্ষেণের জন্য পৃথিবীর সৌখিন জ্যোতির্বিদরা নানারকম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একাজ বাংলাদেশে যথাযথভাবে পরিচালনা ও সর্বসাধারণকে সহযোগিতার জন্য দেশের অন্যতম বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্রের পক্ষ থেকে আইসন পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে। এসব ক্যাম্পে আকাশমোদী মানুষ যুক্ত হবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
১০ নভেম্বর ২০১৩, Anushandhitshu Chokro Science Organization