‘প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার, ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ রঙ-বেরঙের ঘুড়ি ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জাতীয় ঘুড়ি উৎসব শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের আয়োজনে কক্সবাজারের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে দুই দিনের এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে। দুপুরে মহাঘুড়ি উড্ডয়ন ও ২০টি গোলাপ ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
৩১ জানুয়ারী-২০১৪ বিকালে কক্সবাজার সমুদ্র্র সৈকতে বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এবারের ঘুড়ি উত্সবে অজস্র আকর্ষণীয় দেশীয় ঘুড়ি, বিশেষভাবে তৈরি আধুনিক বিশাল হাঙ্গর ঘুড়ি, ঈগল ঘুড়ি, ফ্লাওয়ার ঘুড়ি, ড্রাগন ঘুড়ি, সিরিজ ঘুড়ি, ট্রেন ঘুড়ি, পকেট ঘুড়ি, স্ট্যান্ড ঘুড়ি সহ রংবেরঙের নানা ঘুড়ির উড়ানোর সঙ্গে মেতে উঠেছে সবাই।
অসংখ্য রং-বেরঙের ঘুড়িতে বর্ণিল হয়ে উঠে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আকাশ।
এছাড়া রয়েছে ফানুস উড়ানো, লায়ন ড্যান্স, জর্বিং বল এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের চূড়ায় বাজিকরি ক্রীড়া উৎসব।
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেড়ারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মৃধা বেনু সাংবাদিকদের বলেন, “চীন, সাংহাই ও সিঙ্গাপুরে অনেক রঙ-বেরঙের ঘুড়ি কিনেছি এবং তা আকাশে উড়িয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি। এটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”
ঘুড়ি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে হট এয়ার বেলুন উড্ডয়ন, ঘুড়ি কাটা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান থাকবে বলে তিনি জানান।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হাসানুল হক ইনু বলেন, ঘুড়ি যেমন আকাশে ওড়ে, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনা যুদ্ধাপরাধী রাজাকারমুক্ত আকাশে উড়বে।
এ দেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবশ্যই মানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে যারা মানবেন না তারা বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না। আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের আকাশে ঘুড়ির মতো উড়ে উড়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
যারা মুক্তিযুদ্ধকে মানতে চায় না, তাদের এদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।
সৈকতের বালুতটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সময় তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন- ঘুড়ি উৎসব বাঙালির চিরাচরিত উৎসবেরই অন্যতম। এ উৎসব কারো একার নয়। এটি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বালক-বালিকা সকলের। আর ঘুড়ির যেমন নির্দিষ্ট রঙ ও জাত নেই তেমনি এ দেশে সাম্প্রদায়িকতা বলতে কিছুই থাকতে দেয়া হবে না। এ দেশ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকলের। এদেশে আমাদের সকলকেই মিলেমিশে থাকতে হবে। সবাইকে ভাগ করে নিতে হবে সুখ-দুঃখ।
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি ড. এ আর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত মি. লি জুন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বেসমরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম , চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম.হামিদ , বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান খান কবির , জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পরিবেশ আন্দোলন সংগঠক ড. দীপেন ভট্টাচার্য, ওয়ালটনের উপ-পরিচালক এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ঘুড়ি ফেডারেশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সকাল ১১টায় ‘পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব সবার, ধর্ম যার যার, উত্সব আনন্দ সবার’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, ফানুস ওড়ানোর পর দাহ করা হয় প্রকৃতির বৈরী দানবের কুশপুত্তলিকা। সব শেষে ওড়ানো হয় আলোক ঘুড্ডি।
৩১ জানুয়ারী-২০১৪, http://himucox.blogspot.com