পদ্মার চরে বাঘের নাচ! জাতীয় ঘুড়ি উৎসব ২০১৫

ডোরা কাটা দাগ, লম্বা লম্বা গোঁফ, ধারালো নখে ভয়ঙ্কর থাবা; শিকারে যার জুড়ি নেই। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, নাম শুনলেই ভয় জাগে মনে। সেই বাঘ নাচলো গোঁফ উঁচিয়ে। শুনলে যে কারোরই চোখ কপালে উঠবে। কিন্তু এই বাঘকে ভয়ঙ্কর মূর্তিতে না দেখে তার নাচে খুশি সবার মন।

বাংলাদেশের জাতীয় পশু সুন্দরবনের বাঘের প্রতীকী নাচের আয়োজন করা হয় পদ্মাপাড়ে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে।

আয়োজন ছিল, জাতীয় ঘুড়ি উৎসবের। এই আয়োজনেরই একটি উপাদান বাঘের নাচ। বাঘের এই নাচ মন কেড়েছে সবার।

দু’জন যুবক বাঘের চামড়ার আদলে ডোরা কাটা দাগ। ভয়ঙ্কর গোঁফওয়ালা মুখ, মুখের ভেতর ধারালো দাঁত-জিহ্বা, ধারালো নখের থাবা সদৃশ পোশাক পরে উপস্থাপন করেন বাঘের নাচ।

বনের ভেতর হাঁটতে গিয়ে একটি সাঁকো পার হয়ে বাঘের চোখে পড়লো কাঁকড়া। ইতস্তত হয়ে শিকার করবে না এড়িয়ে যাবে- এ রকম ভাব নিয়ে এদিক-ওদিক তাকানোর পর হঠাৎই থাবা মেরে ঘায়েল করে ফেলে রয়েল বেঙ্গল। এরপর কাঁকড়ার চোখ তুলে ধারালো হাতল ভেঙে মাটিতে শরীর এলিয়ে দিয়ে মজা করে খেয়ে ফেললো।

কাঁকড়া শিকারের পর ঢাকের তালে তালে প্রায় ১০ মিনিট ধরে নাচলো সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সদৃশ দুই যুবক। বাঘের খোলস থেকে বেরিয়ে আসার পর উপস্থিত শত শত উৎসুক মানুষ তালি দিয়ে উপভোগ করেন বাঘের এ নাচ।

চীনের ঐতিহ্যবাহী লায়ন ডান্সের আদলে এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আয়োজন করা হয়।

এই বাঘের নাচের পেছনের কথা জানতে নাচে অংশ নেওয়া মতিঝিল টিঅ্যান্ড টি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা এনামুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সময় চীনের আয়োজনে বাংলাদেশে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তারা। এরপর বৃত্তি পেয়ে দু’জন চীনে গিয়ে ২৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখানে একটি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।

বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের ঘুড়ি উৎসবের আয়োজনে চীনের সম্পৃক্ততার মধ্যে এই বাঘের নাচের আয়োজন করে বাংলাদেশ ড্রাগন অ্যান্ড লায়ন ডান্স স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন।

নাচে অংশ নেওয়া অপরজন স্নাতকোত্তর শেষ করা আনিসুর রহমান বলেন, চীনে লায়ন ডান্সের আদলে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডান্সের থিম তুলে ধরা হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যকে তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

আয়োজকরা জানান, বিশ্বসেরা বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার হ্রাস পাওয়ায় ‘বনের বাঘ থাকুক বনে, ঘুড়ি উড়ুক নীল গগনে’- স্লোগান নিয়ে জাতীয় ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়।

ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. এ. আর. রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ব্যতিক্রমী আয়োজন বাঘের নাচ আমাদের সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

এর আগে সকালে ২০টি বাঘ, ২০টি বাঘ থাবা এবং ২০টি পুষ্প ঘুড়িসহ একগুচ্ছ আধুনিক ও দেশি ঘুড়ি উড্ডয়নের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শিমুলিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীরে উৎসবের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সম্মানিত অতিথি চীনা দূতাবাসের সংষ্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা হুয়াং লি উপস্থিত ছিলেন।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান ছাড়াও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা, স্থানীয় ব্যক্তি গণমান্য ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

দিনব্যাপী আয়োজনে রয়েছে ঘুড়ি কাটাকাটি প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি উড্ডয়ন, সন্ধ্যায় ফানুস ওড়ানো, আলোকময় ঘুড়ি উড্ডয়ন এবং মঙ্গল প্রদীপ আলপনা তৈরি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর, তৈয়ব আহমেদ শেখ, ১০/০১/২০১৫

No Comments Yet

Leave a Reply

Your email address will not be published.