প্যারাগ্লাইডিং, আল্ট্রালাইট, মাইক্রোলাইট প্লেন, হট এয়ার বেলুন, একোয়া গ্লাইডিং, উইঞ্চ প্যারাগ্লাইডিং, প্যারা পাওয়ার ‘হ্যাং-গ্লাাইডিং’ একোয়া হ্যাং গ্লাইডিং, কূলিন ক্রীড়া হিসেবেই পরিচিত। কেন্দ্র জমে উঠলে হাইজেক ডাকাতি না হলে আমাদের সৈকতে যা আছে হয়ে থাকে অনেক অনেক প্যারাগ্লাইডার নিজ গরজেই আসবে। আকাশে উড়া মনোবল আর সাহসিকতা যেখানে পূর্বশর্ত । দেশে দেশে এই ক্রীড়া সমূহ কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নামী দামী পর্যটন কেন্দ্র। ইউরোপ, আমেরিকা তো বটেই, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান আছে এমন অনেক পর্যটন কেন্দ্র। বাংলাদেশেও হতে পারে এমন সব জমকালো পর্যটন কেন্দ্র। যা সারা বিশ্বের উড্ডয়ন বিদ্যার দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের মিলন কেন্দ্র হতে পারে। এমন কেন্দ্র আয়োজন করতে পারলে এবং যথা নিয়মে প্যারা গ্লাইডার নিয়ে হবে উৎসব। এমন উৎসব আয়োন করতে পারলে এটা হবে বিরল ধরণের এক উৎসব । অসংখ্য গ্লাইডার এলাকা জুরে উড়তে থাকবে।
হট এয়ার বেলুন, আল্ট্রালাইট প্লেন, প্যারা সেইল, পকেট কাইট, ষ্ট্যান্ট কাইট,প্যারা পাওয়ার ইত্যাদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহ করে প্রচলন করে এখন বাংলাদেশে প্যারাগ্লাইডিং ক্রীড়া বিকাশের কাজ চলছে।
প্যারা গ্লাইডার চীন থেকে আনা ছিল বছর পাঁচ ছয় আগে। ঘুড়ি উৎসবে প্যারা গ্লাইডার উড়ানোতে একবার ব্যর্থ চেষ্টা একবার করা হয়। সেই থেকে মনের কাঁটা হয়ে আছে ঐ প্যারা গ্লাইডার। উড়ানো জায়গা ঠিক করা ও যথাযথভাবে উড়ানোর আশায় ভারতের মানালীতে তিন চার বছর যাবৎ যোগাযোগ কথা বার্তা চলছে। যাওয়া আসা করতে করতে ব্যক্তি পর্যায়ে বন্ধুত্ব একটু ঘনিষ্ট হয়েছে। পারিবারিক-ব্যবসায়িক সকল বন্ধন আলগা করা বাংলাদেশে এসেসব জমিনে বাস্তবে সম্ভাব্যতা স্থান যাচাই। অভিযান প্রিয় উৎসাহী জনদের প্রশিক্ষণ দেয়া ইত্যাদি বিষয় আলোচনা সহ সকল বিষয়ে চুক্তি বিষয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। চুক্তি মতে যে কোন সময় এখানে আমাদের প্রস্তুতি সাপেক্ষে আমন্ত্রণ জানানোই চলে আসবে। বলা বাহুল্য বরফ ঢাকা মানালীতে সব সময় হয়ে উঠেনা।
বাংলাদেশে শুরু হবে প্যারা গ্লাইডিং। প্যারা গ্লাইডার এর বিড়াট ব্যাগ পিঠে ফেলে গ্লাইডিং এর নেশায় নিজ খরচায় দেশে দেশে ঘুড়ে বেড়ায়। প্যারা গ্লাইডার বা পেল্লাই সাইজের বিড়াট ব্যাগে থাকে বার থেকে পনের কেজি ওজনের প্যারাগ্লাইডার ও হারনেস( উড়ার সময়কার আসন) এবং ঐ বিরাট ব্যাগের উপড়ের দিকে থাকে একটি ছোট পকেট। সেখানে থাকে নিত্য ব্যবহার্য অপরিহার্য দুই একটি কাপড় চোপড় হতে পারে ( শার্ট/গেঞ্জির মত কিছু ও প্যান্টের মত কিছু) যা না হলে নয় এমন কিছু। নির্মোহ প্যারাগ্লাইডিংই এর লোককদের যেন সংসার ত্যাগী ধ্যান জ্ঞান।
যেনতেন প্রকারে ভাঁজ করলে থলেটে আটবেনা। ভাঁজ করার একটা মুন্সিয়ানা আছে। বড় পকেট কাইট,হট এয়ার বেলুন ইত্যাদির তলায়ও ভাঁজের কৌশল থাকে।
মানালী প্যারা গ্লাইডিং এর জন্য আদর্শ স্থান। এখানেই ভারতের প্রথম প্যারাগ্লাইডিং শুরু হয়। বহুপূর্ব থেকে মানালী একটি প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত পর্যটন কেন্দ্র। শৈল পাহাড়ী এলাকা বলে প্যারা গ্লাইডং এর আদর্শ স্থান। এখানে প্রশিক্ষণের জন্য আছে প্রশিক্ষণ ইন্সষ্টিাটউট,আছে অনেক এডমেস্টার ও প্লাটুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ক্লাব। ইন্সষ্টিটিউট পরিচালনা করে ভারতের সামরিক বাহিনী। অন্যান্য পার্বত্য ক্রীড়া ক্লাব আছে,তাঁরা প্রশিক্ষণ ও পরিচালনা করে। আগে একটি মজার দৃশ্য চোখে পরত। রোডাং পাসের পাশের রাস্তায় খাঁড়া দুই পাথরের পাহারের কোনে বাতাসের চাপ অনুভব করা যেত। প্যারা গ্লাইডিং এর আদর্শ স্থান এখানে নিজের প্যারাগ্লাইডারের ব্যাগ ও হারনেস সামনে নিয়ে সারি বেধে আমাদের গ্রামে গঞ্জের যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা সারিবদ্ধ রিক্সা ড্রাইভারের মত বসে থাকত। উড়াল দেয়ার গ্রাহক/লোক পেলে সময় ভিত্তিক চুক্তি সেড়ে উড়াল দিত। আধা ঘন্টার জন্য এক রকম টাকা পনের মিনিট এর জন্য তার চাইতে কম এবং দশ মিনিটের উড়াল আরো কম।
এখন আর ঐ উদার নীতি নেই, এখন প্যারা গ্লাইডার উড়াতে সনদ নিতে হয়। তাই গ্রাম্য দূরন্ত বালকরা আগের মত আর প্যারাগ্লাইডিং খেপ মারতে পারেন না, পরীক্ষা দিয়ে সনদ নিতে হয়। বিষয়টি এখন একটু সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে নেতিবাচক নয় ইতিবাচক। বিষয়টি নিরাপদ করার জন্য আরও আছে প্যারাগ্লাইডিং এর একটি এসোসিয়েশন। তৃতীয় বারের মত সেই মানালী আমরা গেলাম বিস্তারিত যোগাযোগ ও আলোচনা সারতে। আমার সাথে ছিলেন পর্বত আরোহীদের প্রশিক্ষক মীর শামসুল আলম বাবু এবং আমার সহকারী ইসমাইল হোসেন।
বাংলদেশেও এখন প্যারাগ্লাইডিং হতে পারে। যেখানে সারা বছর প্রশিক্ষণ ও ব্যবসায়িকভাবে এ কুলিন ক্রীড়া কেন্দ্র পরিচালিত হতে পারে। ধাপে ধাপে হতে পারে বিশ্বমানের একটি প্যারাগ্লাইডিং এর আদর্শ পর্যটর কেন্দ্র। যার জন্য অপরিহার্য উচু পাহাড়ের সুবিধাজনক ঝাঁপ দেয়ার স্থান এবং সুবিধাজনক বায়ূ প্রবাহ। প্যারাগ্লাইডিং তথা আকাশে উড়া যেমন বিপদজনক তেমনই রোমাঞ্চকর এবং তাই এটা বেশ আকর্ষণীয় । যে কাজ সহজে সবায় করতে পারে তার মধ্যে কোন বিশেষ গৌরব থাকে না। প্যারাগ্লাইডার হলো পাতলা বিশেষভাবে তৈরী নাইলন কাপড়ের বাতাসে ভেসে থাকার একটি বাতাস ভরা বড়সড় ব্যাগ (পকেট কাইট এর মত)। বাতাস ভরে নিয়ে উঁচু জায়গায় থেকে শুণ্যে ঝাপ দেয়া হয়। গঠন বৈশিষ্ঠের কারণে বাতাস ভরা অবস্থায় বায়ূ সূত্রের অনুকুল উড়ার আকৃতি লাভ করে এবং অনুকুল বায়ূ প্রবাহ গ্লাইডারকে ভাসিয়ে রাখে। ভাসতে ভাসতে প্যারাগ্লাইডারের মৌলিক স্থান সমূহে যুক্ত সুতা দিয়ে ডান বাম করা ও উঠা নামার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্যারাগ্লাইডিং এর জরুরি পূর্বশর্ত ওড়ানোর স্থানে (যেখান থেকে ঝাঁপ দেয়া হয়) উর্দ্ধ মুখী বায়ূ প্রবাহ থাকতে হবে। তা রৌদ্র তাপে তপ্ত বায়ূ হতে পারে বা সাধারণ প্রবাহিত বায়ূ উঁচু স্থানে ধাক্কা খেয়ে উদ্ধমূখী বাযূ প্রবাহ হতে পারে। প্যারাগ্লাইডার ঐ বায়ূর উপড় ভর করে উড়ে। তবে দমকা বায়ূ, ঘুর্ণী বায়ূ ইত্যাদি প্যারা গ্লাইডিং এর জন্য বিপদজনক। সুস্থীর বায়ূ প্রবাহ তথা অনুকুল বাতাস পেলে বহু বহু ঘন্টায় দীর্ঘ্য পথ পাড়ি দেয় একজন প্যারা গ্লাইডার। ইচ্ছামত আকাশে থাকার পর প্যারাগ্লাইডার সুবিধামত স্থানে মাটিতে নেমে আসে।
সুবিধাজনক স্থান ও সুবিধাজনক বায়ূ প্রবাহের খোঁজে সারা দেশ চষে অবশেষে গেলাম কক্সবাজার জেলার টেকনাফের নিকটে টেকনাফ থেকে প্রায় পনের/ বিশ কিলোমিটার উত্তরে কক্সপিয়া, বদিয়া,নোয়াখালি পাড়া ইত্যাদি অঞ্চলে ।
উইঞ্চ প্যারাগ্লাইডার : ঘুড়ি ডিজাইনারদের কোন মর্যাদা নেই। আপনি নূতন বৈশিষ্টের একটি উড়োযান তৈরী করেন চারদিকে হৈ চৈ পরে যাবে। একই সূত্রের ব্যবহার করে চমৎকার ঘুড়ি তৈরী করেন। কেউ খবরই রাখবে না। বরঞ্চ ঘড়ে বাইরে একটা তাচ্ছিল্যর ভাব ভোগ করবেন। পৃষ্ঠপোষক সরকারী সংগঠন বলবে আপনারাতো অলিম্পিক আইটেম তালিকা ভুক্ত নন দয়া করে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এইতো বেশী । বাসায় বলা হয় ঘুড়ি বানায় ঘুড়ি উড়ায় এটা কি পরিচয় হলো । এ পরিচয় কি দেয়া যায়। হট এয়ার বেলুন, মাইক্রোলাইট, প্যারা সেইল, প্যারা পাওয়ার, ইত্যাদিরা ঘুড়ি ফেডারেশনের আইটেম।
মোঃ শাহজাহান মৃধা বেনু
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন