শীতের সকালে বকুলতলায় খেজুর রসের মেলা

ফেলে আসা গ্রামের স্মৃতিজাগানিয়া খেজুর রসের স্বাদ নিতে যারা ব্যাকুল ছিলেন, শুক্রবার সকালটা ছিল তাদের জন্য। খেজুর রসের সঙ্গে খই, মুড়ি আর খেজুরের গুড় দিয়ে জমিয়ে তারা সকালের নাশতা সেরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়।

নবমবারের মতো সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’ আয়োজন করে এ রসমেলার। সকালে এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পী আবুল বারাক আলভী এবং মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক শাহজাহান মৃধা বেনু। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বাংলা একাডেমির ফোকলোর বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন, ইউডার চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।

হায়াৎ মামুদ বলেন, এ রসের উৎসবে যারা এসেছেন, তারা সবাই নিজের স্মৃতি, গ্রাম-বাংলা, খেজুরের রস ভালোবেসে এখানে এসেছেন। পৃথিবীতে ভালোবাসাটাই আসল।

শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, ‘দীর্ঘ রোগ ভোগের পর রসের টানে মেলায় এসেছি। রসের মেলায় রস আস্বাদনই মূল কথা।’

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনও খেজুর রসের উৎসব হয়। এ উৎসবে এসে ফেলে আসা শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। এক সময় এ রস ছিল অনেকের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তবে এখন আয়ের উৎস বেড়ে যাওয়ায় এটি অনেক কমে গেছে। শহরে এমন উৎসব বাড়লে, আমাদের জন্য আরও ভালো হয়।

শাহিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা এ উৎসবে এসেছি শেকড়ের টানে। আমাদের বাঙালিয়ানার অনেক সমৃদ্ধ উপাদান আছে। শহরায়নের কারণে তা অনেকগুলোই হারিয়ে যাচ্ছে। বাঙালির উপকরণগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সংস্কৃতি সুরক্ষায় এ ধরনের উৎসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

মেলায় আসা সবাইকে খেজুরের রস, খেজুর গুড়, খই, মুড়ি ও রসের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি বাটিতে খেজুর গুড় ও খই-মুড়ি খেতে খেতে নানা রসালাপে মেতেছিলেন অনেকেই। তা আরও মিঠে করে তোলে পোড়ামাটির গস্নাসে কুয়াশামাখা খেজুর রসের স্বাদ।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে সকালেই সস্ত্রীক এসেছিলেন আব্দুস সালাম আহমদ। এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ মেলায় এসে অনেক বছর পর খেজুর রসের স্বাদ পেলাম। এমন আয়োজন আরও বেশি বেশি হোক, এটাই প্রত্যাশা।

উৎসবের শেষ অংশে পরিবেশন করা হয় গাজী-কালু ও চম্পাবতীর পালা। এটি পরিবেশন করেন নেত্রকোনার মিলান পালাকার ও তার দল। উৎসব সঞ্চালনা করেন রঙ্গে ভরা বঙ্গের সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর ইমরান উজ-জামান।

১৮ জানুয়ারি, ২০২০

No Comments Yet

Leave a Reply

Your email address will not be published.