সমুদ্র সৈকতের আকাশে রঙিন ঘুড়ি

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আকাশে উড়লো ফানুস, মানুষ, ডরিমন, জেলিফিশ, প্রজাপতি, স্পাইডারম্যানসহ রঙ-বেরঙ-এর ঘুড়ি। আর এসব রঙিন ঘুড়ির উড়া-উড়িতে গতকাল শুক্রবার বর্ণিল হয়ে ওঠে কক্সবাজার সৈকতের আকাশ। শুধু তাই নয়, দেশীয় ঐতিহ্যের আদি উপাদান ২৫ ফুট দীর্ঘ বিরাট টেরাকোটা টেপা পুতুল, নৃত্যরত বিশাল হাওয়াই মানুষ, ভয়ঙ্কর ড্রাগন, আকর্ষণীয় চরকি, আলোক সজ্জিত ঘুড়ি, বাংলার বাঘ ছানার নৃত্য ও আতশবাজির চমকও ছিল সৈকতের আকাশজুড়ে। আর বর্ণিল এ আয়োজন সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন হাজারো পর্যটক ও দর্শনার্থী।

গতকাল দুপুর থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী জাতীয় ঘুড়ি উৎসব। ‘চাই নির্মল সৈকত ও সাগরের কক্সবাজার’ এই প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ উৎসবটি মন ছুঁয়ে যায় পর্যটকদের।
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন অয়োজিত দুইদিন এ উৎসব গতকাল বেলা তিনটার দিকে বাংলাদেশে জাতীয় পতাকার আদলে তৈরী করা ঘুরি উড়িয়ে উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ হাসান রাসেল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চীনের রাষ্ট্রদূত মিঃ ঝাং ঝু, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন প্রমুখ। এবারের ঘুড়ি উৎসবে প্রায় ১৫০ জন ঘুড়িয়াল অংশ নিচ্ছেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ হাসান রাসেল বলেন, ঘুড়ি উড়ানো এমন একটি খেলা, আমার মনে হয় প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে এই এটি মিশে আছে। কিন্তু বর্তমানে এই খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এই খেলাকে বাঁচিয়ে বাখতে বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করছে। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সমুদ্র সৈকতে এ ধরনের আয়োজন বেশি বেশি করতে হবে।
তিনি বলেন, নানা কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা আজ-কাল ঘরের চার দেওয়ালে বন্দী হয়ে গেছে। তাদেরকে বাইরে নিয়ে আসতে হবে। তাদের বাইরে এনে এ ধরনের নির্মল আনন্দের ছোঁয়ায় আলোকিত করতে হবে। আমার মনে হয় এ উৎসবকে ভালোবাসে
না এমন মানুষ নেই। তাই এ ধরনের আয়োজনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
এদিকে জাতীয় ঘুড়ি উৎসব উপলক্ষে সামুদ্রিক প্রাণি, মানুষ, কার্টুন, প্রজাপতিসহ নানা আদলে তৈরী দেশি-বিদেশি ঘুড়ি যেন দখল করে নেয় সৈকতের নীল আকাশ। বালুকাময় সৈকতের আকাশে উড়ছে লাল, নীল. বেগুনি. সাদা, রঙ-বেবংয়ের সব ঘুড়ি। এটি পর্যটকদের কাছে অন্যরকম আমেজ তৈরি করছে। শিশুরাও মেতেছে বর্ণিল আনন্দে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক কামরুল হাসান বলেন, কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছি। সেই আনন্দের সাথে ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দও যোগ হল। দুলাল বিশ্বাস বলেন, এতগুলো ঘুড়ি একসাথে দেখে আর ঘুড়ি উড়াতে পেরে আমার বাচ্চাটি খুব বেশি মজা পেয়েছে। এটাই আমার কাছে বড় আনন্দের। তিনি বলেন, সমুদ্র এত সুন্দর, আর এতবড় জায়গায় আমরা ঘুড়ি উড়াচ্ছি সেই অনুভুতি আসলেই অন্যরকম।
ছেলেকে নিয়ে ঘুরি উৎসবে এসে অনেকটা মন্ত্রমুগ্ধ,আন্তজার্তিক সংস্থার কর্মকর্তা ড. আছিং রাখাইন। তিনি বলেন, একসময় নদীর পাড়ে, বেড়িবাঁধের উপর দাঁড়িয়ে আমরা ঘুড়ি ওড়াতাম। আজকে সৈকতে এসে ঘুড়ি উড়াচ্ছি, অনেক অনেক উচ্ছ্বসিত আমি। বিশেষ করে আমার সন্তানটি আরো বেশি আনন্দ পেয়েছে।

জাতীয় ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, ঘুড়ি একটি নির্মল এবং অনাবিল আনন্দের ক্রীড়ার নাম। এই অনাবিল আনন্দের মাধ্যমেই কিছু ভাল কথা আমরা সবাইকে বলতে চাই। তাই এবার আমরা বলেছি, ‘চাই নির্মল সৈকত এবং সাগরের কক্সবাজার’। ঘুরে ফিরে আমরা কক্সবাজারের পরিবেশের কথাই বলতে চেয়েছি। আমরা চাই, এই কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।

ফেব্রুয়ারী ২, ২০১৯, matopath.com

No Comments Yet

Leave a Reply

Your email address will not be published.